ফাহমিদা ফাম্মী
নারী দিবস ছিল গতকাল বুধবার। আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশাল একটা ব্যপার। চারিদিকে অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছে, গান শুনেছি, টেলিভিশনে নারীদের নিয়ে বানানো গান… শুনে বেশ ভালোই লেগেছে, যাক একদিন তো অন্তত গান হল। ‘নারী অধিকার চাই’, ‘নারীদের সমান অধিকার চাই’ বলে বলে একদল পুরুষও নারীদের সাথে গলায় গলায় শ্লোগান দিলেন। কিছু তো অন্তত হচ্ছে! কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল দিবসটি শেষ হওয়ার পরই পরই সব সেই আগের মত হয়ে গেল। আঞ্চলিক ভাষায় বলতে গেলে ‘যেই লাউ সেই কদু’। কথাটার একটু বিশ্লেষণ করা জরুরী মনে করছি।
গতকাল আমার মায়ের বয়সী এক চাচি, তিনি নিজেও নারী দিবসের কঠোর সমর্থক খুব কড়া ভাষায় বললেন, ‘নারী দিবস দিয়ে নারীদের সম্মান বাড়ানোই হয়েছে কমে নাই’… অথচ সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তিনিই তাঁর মেয়েকে যার বয়স ১৯ এর মত, বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেছেন। প্রায়ই তাঁর মুখে বলতে শুনি ঠিক বয়সে বিয়ে না হলে ভালো বিয়ে হবে না! পাশের বাসার এক খালা যিনি প্রায় প্রতিদিন স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার। তাঁর সাথে একদিন কথা হল তিনি নিজেই বললেন ‘একটু মাইর না খাইলে কেমনে হবে? মেয়ে মানুষ একটু তো মাইর খাওয়াই যায়’! গতকাল তাঁর বাসায় গিয়ে দেখলাম নারী দিবস নিয়ে এক টক শো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। জিজ্ঞাসা করলাম খালা আপনার কি মনে হয় এই নারী দিবস সম্পর্কে? তিনি বললেন, ‘ভালোই। বেশ ভালো উদ্যোগ।’ আমি বললাম, খালা আপনি নির্যাতন হচ্ছেন মেনে নিচ্ছেন বুঝতে পারছি এখানে আপনার মেয়ে হলে কি করতেন? তিনি বললেন, ‘কি আর করতাম। মেয়ে হলে একটু মাইর খাওয়াই লাগে, কিচ্ছু করার নাই!’
গতকাল দেখলাম অনেক নারী নেত্রী আছেন যারা ভাষন দিচ্ছেন, যাদের মধ্যে এমন হয়ত কয়েকজন আছেন শুধু মাত্র হাইলাইট হওয়ার জন্যই এই সামনে আসা। নারীদের মঙ্গল তারা আদৌ চান কিনা সন্দেহ হয় ভীষণ। বিশ্বে দিবসের অভাব নাই।হাত ধোওয়া দিবস, গাছ লাগানো দিবস! নারীদের জন্যও দিবস! কিন্তু কেন? যেখানে আমরা সমঅধিকারের কথা বলি, সব জায়গায় নিজেদের অবস্থানের কথা বলি, সেখানে আমরা কেন স্পেসিফিক ডে পালন করবো আমাদের জন্য? কেন বছরের প্রতিটা দিন আমরা আমাদের অধিকার গুলো নিয়ে কথা বলবো না? কেন আমরা শুধু মাত্র এই একটা দিবসেই শ্লোগান দেবো? কেন প্রত্যেকটা দিন আমাদের হবে না? কেন না?